‘শিরকে খফী’ বা গোপন শিরকের ফেতনাহ

অধ্যায়ঃ ফেতনাহ

গোপন শিরক কি?

গোপন শিরক মানুষের বিভিন্ন কথা ও কাজে গোপন থাকে, অনেক সময় এই রোগে আক্রান্ত মানুষ নিজেও হয়তো বুঝতে পারেনা যে, সে শিরক করছে। এইজন্য একে গোপন শিরক বলে। ড. ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ আল-বুরকাইন বলেছেন, “গোপন শিরক হচ্ছে হৃদয়ের এমন ইচ্ছা বা মুখের এমন কথা, যার দ্বারা আল্লাহর সাথে গায়রুল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুকে) সমান মনে করা হয়। অথচ, সে ইচ্ছা বা কথা এমন গোপনে অন্তরে বিরাজ করে যে, ঐ ব্যক্তি তা সহজে শিরক হিসেবে ধরতে পারেনা, বা তাকে শিরক বলে মনে করেনা। এ শিরকটি কখনো ‘শিরকে আকবার’ (বড় শিরক) আবার কখনো ‘শিরকে আসগার’ (ছোট শিরক) হয়ে থাকে। ব্যক্তির অন্তরে গোপন থাকে বলে এই শিরককে ‘শিরকে খফী’ বা গোপন শিরক বলা হয়।” আল-মাদখাল।

গোপন শিরক কতটা গোপন থাকে?

প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা বলেছেন, “গোপন শিরক এতোটাই গোপন বা লুকায়িত থাকে, যেন অন্ধকার রাতে কালো পাথরের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া কালো পিঁপড়ার মতো গোপন (যা কেউ দেখতে পারেনা)।” তাফসীর ইবনে কাষীর।

গোপন শিরকের ভয়াবহতাঃ

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বের হয়ে আমাদের নিকটে আসলেন। এমতাবস্থায় আমরা দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জালের চাইতেও অধিক ভয়ংকর কোন কিছুর সংবাদ দিব? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, “তা হচ্ছে গোপন শিরক।” মুসনাদে আহমাদঃ ১১২৭০; ইবনু মাজাহঃ ৪২০৪, হাদীসটি হাসান সহীহ, শায়খ আলবানী।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “হে লোক সকল! তোমরা গোপন শিরক থেকে নিজেদেরকে রক্ষা কর।” সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! গোপন শিরক কি?” তিনি বললেন, “কোন ব্যক্তি সলাত আদায় করার জন্য দাঁড়াল, অতঃপর পরিশ্রম করে সালাতকে সুন্দর করে আদায় করে, কেননা সে দেখছে যে মানুষ তার প্রতি লক্ষ্য করছে। আর এটাই হচ্ছে গোপন শিরক।” সুনানে বায়হাকী, মুসনাদে আহমাদঃ ১১২৭০।

গোপন শিরকের কিছু উদাহরণঃ

ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম আল-জাওজিয়া রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “শিরকে আসগারের উদাহরণ হচ্ছে মসজিদে লোক দেখানো ইবাদত করা, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না করে মানুষকে খুশি করার জন্য কোন ইবাদত বা আমল করা, “আল্লাহ এবং আপনি না থাকলে এমন এমন জিনিস হতো” – এই কথা বলা।” তাইসিরুল আ’যিযিল হা’মিদ, কিতাব আত-তাওহীদের ব্যখ্যা।

প্রকাশ্য ও গোপনীয়, জেনে বা না জেনে কৃত যাবতীয় শিরক থেকে বাঁচার জন্য দুয়াঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো একটা দুয়া আছে, কেউ যদি প্রতিদিন সকালে ও বিকালে একবার বা তিনবার করে পড়েন, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে শিরক থেকে হেফাজত করবেন। আপনি কি জানেন, সেই দুয়াটা কি? দুয়াটা হচ্ছেঃ

اللَّهُمَّ  إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লাম, ওয়া আস-তাগফিরুকা লিমা লা আ’লাম।

অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমার অজানা অবস্থায় কোনো শিরক হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

আহমাদ ৪/৪০৩, হাদীসটি সহীহ, সহীহ আল-জামে ৩/২৩৩। হিসনুল মুসলিমঃ পৃষ্ঠা ২৪৬।